Friday, May 29, 2015

হার্টের ব্যথা- এঞ্জাইনা পেকটোরিস (Angina Pectoris) !!




হার্টের ব্যথা----
হার্ট প্রতি মিনিটে ৬০- ৯০ বার স্পন্দন করে । এই স্পন্দের মাধ্যমেই সারা শরীরে রক্ত ছড়িয়ে দেয় আবার ফিরিয়ে আনে যা সরবরাহ করে করোনারি ধমনী সমুহ । অর্থাৎ একজন সুস্থ মানুষের গড়ে প্রতিদিন ১৫,০০০ লিটার রক্ত এই ধমনী সমুহ দিয়ে আসা যাওয়া করে ( অন্য এক হিসাবে দেখা যায় –মাতৃগর্ভে ভ্রূণ অবস্থায় হৃৎপিন্ড তার কাজ শুরু করা থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন মানুষের প্রায় ৩,০০,০০০,০০০ বার হার্ট স্পন্দন করে যা ৩০০,০০০ টন সমপরিমান রক্ত চলাচল করে)। হৃৎপিণ্ডের ভেতরের অংশে দুইটি সংযোগবিহীন প্রকোষ্ঠ আছে। প্রত্যেক প্রকোষ্ঠ আবার আড়াআড়িভাবে আরো দুইটি করে প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। উপরের প্রকোষ্ঠগুলোকে অরিকল এবং নিচের প্রকোষ্ঠগুলোকে ভেন্ট্রিকল বলে। এসবের ভেতর দিয়ে রক্ত চলাচলের জন্য পথ আছে যা ভাল্ব দিয়ে সুরক্ষিত। অরিকল থেকে রক্ত নিচে নামতে পারে কিন্তু ভেন্ট্রিকল থেকে তা অরিকলে প্রবেশ করতে পারে না। ওই ভাল্ব তাতে বাধা দেয়। এরূপ ৪টি ভাল্ব আছে। ভাল্ব হল কপাটিকা বা দরজা। ডান ও বাম ভেন্ট্রিকলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির আরও দুটি ভাল্ব আছে যথাক্রমে ডানেরটি পালমোনারি ভাল্ব ও বামেরটি এওর্টিক ভাল্ব নামে পরিচিত।
হার্ট অ্যাটাক বলতে বুঝায়----
হার্ট যখন আমাদের শরীরের রক্ত পাম্প করে তখন করোনারি ধমনী নামক রক্তবাহী নালীর মাধ্যমে হার্ট অক্সিজেন ও পুস্টি সমৃদ্ধ রক্ত লাভ করে নিজে বাঁচার জন্য। কিন্তু যখন কোন কারনে এই রক্তবাহী নালীগুলি ব্লক বা বন্ধ হয়ে যায় বা সংকুচিত হয়ে যায় তখন হার্টের পেশী রক্ত পায় না বা হার্ট আর সঙ্কোচন প্রসারন করতে পারেনা, ফলে হার্ট মারা যায় বা যাওয়ার সম্ভবনা থাকে এটাই হার্ট অ্যাটাক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ইহাকে Myocardial infarction বলা হয় যা Coronary Heart Disease এর একটি অংশ । হার্টের Cardiac Muscle Cell (Cardiomyocytes) বা মাংশ পেশী সমুহের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়াই হার্ট অ্যাটাক।
করোনারি ধমনীর অসুখ বা হার্ট অ্যাটাক দুই প্রকার।
১) এঞ্জাইনা পেকটোরিস (Angina Pectoris)
২) মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (Myocardial Infarction )
এঞ্জাইনা পেকটোরিস (Angina Pectoris) ----
এঞ্জাইনা পেকটোরিস কে অনেকে বক্ষশূল বলে থাকেন। বুকের মধ্যে বক্ষাস্থি বা স্টার্নামের নীচে মাঝে মাঝে ব্যথার আক্রমণ হয় এবং তা বাম হাত বেয়ে পরিচালিত হয়। কোনো প্রকার পরিশ্রম করলেই এ ব্যথার আক্রমণ হয় এবং ব্যথা সহ বুকের মধ্যে এক ধরনের চাপবোধ বর্তমান থাকে। বিশ্রাম করলে এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এমিল নাইট্রেটে Q এর ঘ্রাণ নিলে তৎক্ষণাৎ ব্যথার উপশম হয়। পরিশ্রম না করলে এ ব্যথা হয় না এটাই এঞ্জাইনা পেক্টোরিস।
হৃদ পেশির মধ্যে রক্তপ্রবাহ ঘাটতি (Ischemia) দেখা দিলে, অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে হৃৎপিন্ডের কর্মকান্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি (Atherosclerosis of the Cardiac arteries) হলে এধরণের ব্যথা অনুভূত হয়।
এঞ্জাইনা পেক্টোরিসের ভিন্ন প্রকারের হতে পারে----
১) স্থির প্রকৃতির এঞ্জাইনা (Stable Angina): মাইওকার্ডিয়াল ইস্কেমিয়া বা হৃৎপেশীতে রক্তস্বল্পতাবশতঃ সৃষ্ট এঞ্জাইনা যা সাধরণ কাজের মাঝে যেমন-- হাঁটাচলা বা দৌড়ানোর প্রাক্কালে দেখা দেয় এবং বিশ্রামকালে তেমন কোনও লক্ষণ থাকে না।
২) অস্থির প্রকৃতির এঞ্জাইনা (Unstable Angina): এই প্রকারের এঞ্জাইনাকে ক্রিসেন্ডো এঞ্জাইনা (Crescendo Angina) নামেও অবিহিত করা হয় যা একিউট করোনারী সিন্ড্রোম (Acute Coronary Syndrome)। এই শ্রেনীর এঞ্জাইনাতে নিম্নের ৩টি লক্ষণের যে কোনো একটি অবশ্যই থাকবে :
বিশ্রামকালে আক্রমণ হয়, সচরাচর কোনো লক্ষণ থাকে না, ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি অত্যন্ত মারাত্মক রূপ নিতে পারে যদি ৪-৬ সপ্তাহের ইতিহাস থাকে।
মাইক্রোভাসকুলার এঞ্জাইনার কথা শুনা যায় (Microvascular Angina)---- হার্টের পেশীতে রক্ত সংবহন কম কিন্তু Coronary Arteries এ রক্ত সংবহন ঠিক থাকে এটাই Microvascular Angina।
প্রিঞ্জমেটালস্ এঞ্জাইনা (Prinzmetal’s Angina) নামে আরো এক ধরণের এঞ্জাইনার আছে যার জন্য করোনারী আর্টারির তেমন অসুবিধা থাকে না কিংবা থাকলেও অদৃশ্য অবস্থায় বিদ্যমান থাকে এবং সাধারনত মহিলাদের মধ্যে এর আক্রমণ দেখা যায়।
এঞ্জাইনা পেক্টোরিসের কারণ---- যে কোন বয়সে হতে পারে যদি ও ফ্যাটি বা ফাইব্রয়েড যুক্ত হার্টের কারনে ৪০ বছরের উপরে পুরুষেরা বেশির ভাগ আক্রান্ত হন তার পর ও ২৫-৩০ বছরের যুবকদের মধ্যে অনেক সময় অন্য ভাবে দেখা যায় । যা অনেক সময় হার্ট এটাক্ট জাতীয় মারাত্মক কিছু হতে পারে, মুলত অনেক সময় অনেকের হার্ট এটাক্টের প্রথম একটি লক্ষন বলে মনে করা হয়, যদি ফ্যাট বা অন্য কারনে করোনারি ধমনী চিকন বা ব্লক হওয়ার সম্বাভনা থাকে ।
Coronary Heart Disease বা হার্ট এটাক্ট অনেক সময় বংশগত প্রবণতার কারনে ও হতে পারে।
কাদের জন্য ঝুকি বেশি ?
বংশগত কারন ছাড়া ও হাই ব্লাড প্রেসার ,ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টোরড়ে, নেফ্রাইটিস, গ্রন্থিবাত, বাতজ্বর প্রভৃতি সংক্রামক রোগ এবং অত্যধিক মদ্যপান ও মাদকাসক্তি, ধুমপানের অভ্যাসও এর প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। দৌড়ানো, দ্রুতহাঁটা এমনকি ঠান্ডালাগা, অতিরিক্ত ভোজন , যৌনক্রিয়া প্রভৃতির কারনে আক্রমণ করতে পারে Minor ভাবে যা পরবর্তীতে ঘন ঘন আক্রমনের শিকার হতে দেখা যায় । কারও কারও বেলায় হঠাৎ রেগে যাওয়া বা উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ও এনজাইনা শুরু হয়ে যেতে পারে এবং ব্যথার সাথে রোগীর অন্য উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট, পেট ফাপা, অস্থিরতা, বুক ধড়ফর করা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে অথবা কেউ কেউ অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে ও দেখা দিতে পারে আবার পরিশ্রম বন্ধ করে বিশ্রাম নিলে এই ব্যথা সাময়িক ভাবে কমে যেতে ও দেখা যায় ।
এঞ্জাইনা পেক্টোরিসের লক্ষণ----
হঠাৎ করেই ব্যথার আক্রমণ উপস্থিত হয়। আক্রমণের উপক্রম হলেই রোগী হঠাৎ সর্ব্বশরীর আড়ষ্ট এবং দম বন্ধ করে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে পড়ে; বেদনা দুই-এক মিনিটের মধ্যেই অন্তর্হিত হয়।
এই বেদনা সাধারণত বক্ষাস্থি বা স্টার্নামের উর্দ্ধাংশ হতে সূচিত হয় এবং তা অতি তীব্র হয়ে বাম হাত বেয়ে আঙুলের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত এবং কখনো কখনো ঘাড়ের বাম পাশে ও মাথার
পেছনের দিকে বিস্তার লাভ করে। কখনো বা ডান হাতে এবং পেটের ভেতরেও এই
ব্যথা সঞ্চারিত হয়। বুকের মধ্যে অসহনীয় চাপবোধ অথবা সমস্ত বুক সাড়াশি দিয়ে মুচড়ে ধরার
ন্যায় তীক্ষ্ণ যাতনা বোধ করে; সামান্যতম নড়াচড়া করার ক্ষমতাও থাকে না এবং রোগী আশু মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। এরূপ আক্রমণকাল ২-৩ মিনিটের বেশী স্থায়ী হয় না। সমস্ত দেহে প্রচুর ঘাম, মুখের মধ্যে প্রচুর লালাস্রাব, বমির ভাব, প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব ইত্যাদি হয়ে আক্রমণ
চলে যায় । কখনো কখনো আক্রমণ পুনঃ পুনঃ ও দীর্ঘস্থায়ী হতে দেখা যায়। এই অবস্থাকে স্টেটাস এঞ্জিওসাস বলে।
অন্যদিকে বহুকাল পরেও পুনরাক্রমণ হতে দেখা যায়। আক্রমণের পর রোগী অবসন্ন বোধ করেন ও হাপাঁতে থাকেন এবং আক্রান্ত স্থানে কয়েকদিন যাবত স্পর্শে ব্যথা বোধ করে। বেদনা চলাকালীন সময়ে পালস নিয়মিত, ধীর বা দ্রুত কিংবা অনিয়মিত হতে পারে। তবে এ সময়
ব্লাডপ্রেসার প্রায়ই হাই হয় । হার্ট পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট রোগের পরিচয় ছাড়া অন্য কোনো লক্ষণের আলামত পাওয়া যায় না।
মনে রাখতে হবে এঞ্জাইনা পেক্টোরিস হার্টের অন্য অসুখের কারনে হলে সেই মোতাবেক একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কে দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে এবং যদি অন্য অসুখের কারনে না হয় তা হলে একজন চিকিৎসক কে দিয়ে স্বাভাবিক চিকিৎসা করালে ভাল হয়ে যাবেন, তবে ইহা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে, বিশেষ করে হার্টে যতাযত অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি না ঘটে চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত সে জন্য রোগীকে শুইয়ে রাখতে হবে এবং
সকল টাইট জামাকাপড় ঢিলা করে দিতে ভুলবেন না – তবে গুরুত্বর মনে করলে এবং যদি অক্সিজেন সিলিণ্ডার পাওয়া যায় তা হলে রোগীকে অক্সিজেন দিতেই হবে ।
এঞ্জাইনা পেক্টোরিস যদি প্রথম অবাস্তায় হয়- আক্রমণের সময় কাজ-কর্ম বন্ধ করে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকলেই ব্যথা দূরীভুত হয়। বা কোন কারন ছাড়া এই ধরণের ব্যথা অনুভব করলে বাম হাত উপরের দিকে তুলে নিয়ে বেশ ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার চেস্টা করুন, দেখবেন এক মিনিটের ভিতর তা চলে গেছে এবং পরে বিশ্রাম নেওয়ার চেস্টা করুন , তিন বা পাচ মিনিটের ভিতর ভাল না হলে আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা
দিবেন।
এঞ্জাইনা পেক্টোরিসের পরিণতি---- বংশানুক্রমিক রোগে, বিশেষ করে তুচ্ছ কারণে আক্রমণ হলেও এর পরবর্তীতে খারাপের দিকে চলে যায় । প্রথম আক্রমণে প্রায়ই মৃত্যুর কোন কারণ থাকে না। কিন্তু পরে ঘন ঘন আক্রমণের ভেতরেই মৃত্যু হতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে কঞ্জেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর এবং করোনারি থ্রম্বোসিস হয়ে অনেকের মৃত্যু হয়। যদি এঞ্জাইনা পেক্টোরিস না কমে তা হলে ধরে নিতে নিতে হবে হার্টের যে কোন একটা খুব বড় ধরণের অসুবিধা আছেই যা রোগে প্রকাশকাল থেকে ৭-৮ বছরের উপর জীবিত থাকতে পারবেন না , যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা
গ্রহণ না করা হয় ।
বিশেষ সতর্কতা---- অতি বৃদ্ধ, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা কোন রকম বুকে ব্যথার অনুভূতি ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকে ভুগে থাকতে পারেন। যারা দীর্ঘদিন অ্যানজাইনা পেকটোরিস মৃদু
বুকে ব্যথা, যা শারীরিক কাজের চাপ বৃদ্ধিতে (যেমন সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা, দীর্ঘক্ষণ হাঁটা, দৌড়ানো, ভারী কাজ করা ইত্যাদি) বাড়ে এবং বিশ্রাম নিলে বা নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ঔষধে কমে যায় এবং মনে করেন এ ধরণের রোগে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে যদি বুকে ব্যথা বিশ্রাম
বা নাইটোগ্লিসারিন জাতীয় ঔষধে উপশম না হয় তাহলে বুঝতে হবে তিনি হার্ট অ্যাটাকে ভুগবেন ইহা নিশ্চিত , সে জন্য সকলের সাবধান থাকতে হবে ।
আমাদের হোমিওপ্যাথিতে এ রোগের জন্য ভাল চিকিৎ্সা আছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে মোটামুটি ভাল থাকে।

Dr. Faridul Islam Shohag 
D.H.M.S (BHB-Dhaka)
P.D.T (Homeopathic Medicine)
M.P.H (Nutrition). 
Consultant, Homeopathic Medicine & Nutrition.





No comments:

Post a Comment

ক্যালসিয়াম (Calcium) সমাচার!!

ক্যালসিয়াম সমাচার!! অনেক মানুষ মুড়ির মত যে ওষুধগুলো খায়, তার মধ্যে ক্যালসিয়াম (Calcium) ট্যাবলেট একটি। শরীরে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা সুবিস্তৃত। ...